উৎপাদিত ফসল বিক্রি করতে না পেরে চরম বিপাকে পড়েছেন নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ ও সৈয়দপুর উপজেলার সৃর্যমুখী চাষীরা। সরকারীভাবে সূর্যমুখী তৈলবীজ ক্রয়ের ব্যবস্থা না থাকায় এবং স্থানীয়ভাবে উপযুক্ত ক্রেতার অভাবে এ সমস্যা দেখা দিয়েছে।

কৃষি অফিসও কথামত এখন বীজ বিক্রয়ে সহযোগীতা না করায় দুই উপজেলার প্রায় সাড়ে ৩ শতাধিক কৃষক লোকসানের আশঙ্কায় দিশেহারা। জানা গেছে নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার সূর্যমুখী চাষাবাদকারী কৃষকদের। তারা উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শে ও প্রণোদনার বীজ নিয়ে সূর্যমুখী চাষ করেছিল। ফলনও পেয়েছে আশাতীত। উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের ১৯০ জন কৃষক প্রায় ২৯ হেক্টর জমিতে এর আবাদ করেছে।

অথচ কৃষি অফিসের লক্ষমাত্রা ছিল মাত্র ২ হেক্টর জমি। ‘লাভজনক ফসল ও খরচ কম’ কৃষি অফিসের এমন প্রচারণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে চাষীরা নতুন ফসল হওয়ার পরও বেশি লাভের আশায় সূর্যমুখী চাষ করে এখন চরম বেকায়দায় পড়েছে।

অন্য দিকে নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলা কৃষি দপ্তরের পরামর্শে প্রথমবারের মত এ উপজেলায় প্রায় তিনশতাধিক কৃষক ৪০৬ বিঘা জমিতে সুর্যমুখী ফুলের চাষ করে। সঠিক নজরদারি এবং পরিচর্যার কারণে ফলন ও হয়েছে বাম্পার।

কিন্তু সুর্যমুখীর সঠিক ব্যবহার না জানা এবং ক্রেতা না থাকার কারণে কৃষকের উৎপাদিত ফসল বাড়িতে নষ্ট হতে বসেছে। সেইসাথে সরকারীভাবে ক্রয় বা বিক্রির ক্ষেত্রে কৃষি অফিসের সহযোগীতা না থাকায় অর্থকরী এ ফসলই এখন গলার কাটা হয়ে দেখা দিয়েছে।

সৈয়দপুর উপজেলার কাশিরাম বেলপুকুর ইউনিয়নের সিপাইগঞ্জ বাজারের হোটেল ব্যবসায়ী জিয়াউর রহমান বলেন, কৃষি অফিসারের অনুপ্রেরণায় এই প্রথম কুঠিরঘাট চিকলী নদীপাড়ের ৪৫ শতক জমিতে সূর্যমুখী আবাদ করে বেশ ভালো ফলন পেয়েছি। কিন্তু বিক্রি করতে পারছিনা।

প্রায় ২ মাস থেকে বীজগুলো বাড়িতে পড়ে আছে। কিশোরগঞ্জ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম বাবু বলেন, আমি কৃষি অফিসের পরামর্শে তিনবিঘা জমিতে সুর্যমুখী ফুলের চাষ করেছিলাম। তিনবিঘা জমিতে আমার ১০ মন সুর্যমুখীর বিচি হয়েছে।কৃষি অফিস বলেছিল সুর্যমুখী চাষের পর তারা বিক্রির সব ব্যবস্থা করে দেবেন। কিন্তু এখন তারা বিক্রির ব্যবস্থাতো দুরে থাক সুর্যমুখী চাষিদের দিকে ফিরেও তাকাচ্ছেনা।

তাই কৃষকরা সুর্যমুখীর বিচি নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। এতে খরচ তো ওঠেইনি উল্টো বীজ পরে থেকে নষ্ট হয়ে লাভের সাথে আসলও যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। কৃষি অফিস কথা দিয়ে না রাখায় এ পরিস্থিতিতে পরেছি আমরা। তারা বিক্রির ব্যবস্থাও করেনি। বরং এখন যোগাযোগই বন্ধ করে দিয়েছে।

সূর্যমুখী চাষ করে উপজেলার প্রায় ২ শতাধিক কৃষকের মাথায় হাত। কিশোরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান বলেন, আমরা কৃষি দপ্তরের পক্ষ থেকে ঢাকার এক ব্যবসায়ীর সাথে সুর্যমুখীর তৈলবীজ বিক্রির জন্য যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছি। ‘

আশা করছি দু’একদিনের মধ্যে একটা ব্যবস্থা করতে পারব। আমরা সুর্যমুখী চাষীদের সাথে যোগাযোগ করে তাদের উৎপাদিত সুর্যমুখী বীজ বিক্রির চেষ্টা করছি। তিনি আরো বলেন, যেহেতু কিশোরগঞ্জে এবার প্রথম তাই একটু সমস্যা হচ্ছে।

পরবর্তীতে এ সমস্যা আর থাকবেনা। সৈয়দপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহিনা বেগম বলেন, কৃষকরা সূর্যমুখী চাষে রেকর্ড করেছে। প্রথমবারেই তারা আশাতীত ফলন এনেছে। কিন্তু বিক্রি করতে না পেরে সাময়িক সমস্যায় পড়েছে। তবে অনতিবিলম্বে এ সমস্যা দূর হবে।

সূর্যমুখীর তৈলবীজ খুবই স্বাস্থ্যসম্মত ভোজ্যতেলের উৎস্য। এর বাজার মূল্য অনেক ভালো। কিন্তু এ এলাকায় সূর্যমুখী তেলের উৎপাদন ও ব্যবহার সেভাবে প্রচলণ না থাকায় এমন অবস্থা দেখা দিয়েছে। তবে সহসাই বাইরে থেকে ক্রেতা এসে সঠিক দামেই বীজ ক্রয় করবে। সেজন্য আমাদের চেষ্টা অব্যাহত আছে